বর্তমান সময়ে প্রতিদিনেই বেড়ে চলছে অনলাইনে ব্যবসা। আর এই ব্যবসা করতে এসে প্রথম অবস্থায় অনেকেই লাভবান হলেও কিছু সময় পরে এসে মুখ থুবড়ে পড়ছে। যার কারণটি হচ্ছে ব্যবসা শুরু করার পূর্বে সঠিক পন্থা অবলম্বন না করা। অনলাইন ব্যবসা শুরু করার সময় কিছু বিষয়ে ধারণ রাখা দরকার। আজকে সেই বিষয়গুলো তুলে ধরবো আপনাদের কাছে। যেখানে নতুন ও পুরাতন উদ্দোক্তাদের কে অনলাইন ব্যবসার সফল হবার একটি পুর্নাঙ্গ ধারণা প্রদাণ করবো। আর্টিকেলটি অবশ্যই একটু সময় নিয়ে সম্পূর্ণ পড়বেন।

চলুন শুরু করা যাকঃ

অনলাইন ব্যবসা নিয়ে শুরু করার পূর্বে একটু অফলাইন ব্যবসা নিয়ে আলোচনা করি। আমি যদি অফলাইনে একটি ব্যবসা করতে চাই সেক্ষেত্রে আমাকে কয়েকটি কাজ করতে হবে। প্রথমত ব্যবসা করার জন্য আমাকে ব্যবসার জন্য ভালো প্রডাক্ট নির্বাচনসহ ভালো জায়গা নির্বাচণ একটি রুম বা দোকান ভাড়া নিতে হবে। এরপর রুমে আমাকে লাইটিং, ফ্যান বা এসি ইত্যাদি লাগাতে হবে, এরপর ব্যবসার অবস্থার উপর ভিত্তি করে আমাকে দোকানে এক বা একাধিক কর্মচারী রাখতে হবে। আর ব্যবসার প্রচারের দিকে লক্ষ্য রেখে আমাকে বিভিন্ন ইভেন্ট টার্গেট করে ব্যানার, পোস্টার এবং মাইকিং করতে হবে। এই এত কিছুর পরেও আমার দোকান থেকে প্রডাক্ট সেল করতে হলে আমাকে আমার কাস্টমারের সাথে যথেষ্ট ভালো আচরণ করতে হবে এবং প্রয়োজনে ডিস্কাউন্ট দিয়ে আমার পন্য সেল করতে হবে। এই সব কাজগুলো শেষ করেই একজন ব্যবসায়ী লাভবান হবেন।

offline shop

এখন যদি আমারা একটু পুনরায় লক্ষ্য করি অফলাইন ব্যবসা করতে গেলে কি কি পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে,

  • পন্য নির্বাচণ
  • ব্যবসার স্থান নির্বাচন
  • ব্যবসার স্থানকে আকর্ষনীয় করা (লাইটিং, ডেকরেশন, নেইমপ্লেট, সাইনবোর্ড ইত্যাদি)
  • প্রমোশন (ব্যানার, পোস্টার, মাইকিং)
  • কর্মচারী নিয়োগ
  • ভালো আচরণ ও ডিস্কাউন্ট

এই ছয়টি কাজ করার পরেই সেল আনা সম্ভব। যেখান থেকে সেল নিশ্চিত হবে।

এবার যদি একটু ব্যবসায়ীর ইনভেস্টমেন্ট এর স্থানগুলো চেক করি তাহলে দেখতে পাবো,

  • পণ্য ক্রয়ের মূল্য
  • দোকান ভাড়া (মাসিক)
  • ইলেক্ট্রিসিটি বিল (মাসিক)
  • ডেকরেশন বিল (বার্ষিক)
  • প্রমোশন বিল (মাসিক)
  • কর্মচারী বিল (মাসিক)

এখন যদি আমি ব্যবসা করে লাভবান হতে চাই তাহলে আমাকে এই ছয়টি বিলের চার্জ একত্রিত করে পন্যের মুল্য নির্ধারণ করতে হবে, তবেই আমি লাভবান হবো এবং আমার ব্যবসা চলমান থাকবে।

Online businesss

অনলাইনে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে আমরা যদি একটু লক্ষ্য করি তবে ধাপগুলো দেখতে পারবো, (আমরা যারা অনলাইনে ব্যবসা চলমান রেখেছি বা শুরু করবো ভাবছি এদের মধ্যে ৮০-৯০ শতাংশ ব্যবসায়ীর ক্ষেত্রে),

  • পন্য নির্বাচণ
  • ফেইসবুক পেইজ
  • সেল (অধিকাংশের ক্ষেত্রে)
  • বুস্ট + সেল।

যদি একটু লক্ষ্য করি তাহলে দেখতে পারবো অধিকাংশ লোকই ৩ স্টেপ এবং প্রায় ব্যক্তিরাই ৪ স্টেপে এসে সেল প্রত্যাশা করছে। যা সম্পূর্ণভাবে একটি ভূল পদক্ষেপ। যার কারণে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অনলাইন ব্যবসায়ীরা ব্যবসা শুরু করার পর থুবড়ে পড়ছে।

 

অনলাইন ব্যবসার সঠিক ধাপগুলো নিয়ে পূর্নাঙ্গ আলোচনা করার পূর্বে একটু আমার কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি।

৬ বছর ধরে ডিজিটাল মার্কেটিং এবং ২ বছর ধরে ডিজিটাল এজেন্সী পরিচালনা করতে গিয়ে আমি অনেক দেশীয় উদ্দোক্তার সাথে পরিচিত হই এবং সার্ভিস দিয়ে থাকি। যাদের মধ্যে ৯৯% লোক আমার কাছে আসে তাদের ফেইসবুক পেইজের বুস্ট করাতে। যাদের বুস্ট বাজেট থাকে ২০০০-৩০০০ টাকা। টার্গেট থাকে পুরো দেশ, আর প্রত্যাশা থাকে ১০০-১৫০ সেল। আর প্রায় ক্ষেত্রে ৬০% উদোক্তারা ১ বার বুস্ট করেই থেমে যায়। বাকি ৩৮% ২-৩ বার বুস্ট করেই থেমে যায়। আর বাকি ২% আমার সাথে বিজনেস স্টাট্রেজি মেনে কাজ করে যায় এবং লাভবান হয়।

আমি প্রায়ক্ষেত্রে ক্লায়েন্টদের কাজ থেকে কয়টি প্রশ্ন পেয়ে থাকি এর উত্তর দিতে গিয়ে আমি তাদেরকে কিছু প্রশ্ন করে থাকি।

ক্লায়েন্ট প্রশ্নঃ ভাইয়া আমি ১০০০০-২০০০০ টাকার পন্য ক্রয় করেছি আপনি কতটি সেল দিবেন বুস্ট থেকে।

আমার ক্লায়েন্ট কে উত্তরঃ আপনাকে ফেইসবুক প্রতিদিন ২০-৩০ টি এডস দেখায় আপনি এখান থেকে ১ মাসে কতটি পন্য কিনেছেন, কতটি দোকানে মেসেজ করেছেন? বা আপনার পরিচিত জনেরা কতটি পন্য অনলাইনে অর্ডার করেছে?

ক্লায়েন্টের উওরঃ প্রায়ক্ষেত্রে একটিও না। ২-১ জনের ক্ষেত্রে ১টি সর্বোচ্চ।

এখন আমার উওর তাহলে আপনি ১০০০-২০০০ টাকা বাজেটে কেবল একটি পেইজ খুলে প্রত্যাশা রাখেন যে আপনার ১০০-১৫০ সেল আসবে?

আমার ক্লায়েন্টকে আবার প্রশ্ন ( যারা অনলাইনে কেনাকাটা করেন): আপনি অনলাইনে পন্য কেনার ক্ষেত্রে সময় যার থেকে পন্য কেনেন আর যার থেকে কেনেন না সেক্ষেত্র কি কি বিষয় খেয়াল করেন?

ক্লায়েন্টের উত্তরঃ
*** যাদের থেকে কিনি না।
১. নতুন পেইজ এবং লাইক কম
২. যাদের পেইজে কাস্টমার রিভিউ একদম কম
৩. যাদের পেইজে লাইভ নেই।
৪. যাদের পেইজের পূর্বের পোস্ট এবং কমেন্টে বিশ্বাস যোগ্যতা আছে।
৫. ভালো রেসপন্স করে না
৬. ডেলিভারীর আগেই টাকা চায়।

*** যাদের থেকে কিনি
১. পেইজের বয়স আছে এবং লাইক মোটামুটি ভালো।
২. যাদের পেইজে কাস্টমার রিভিউ আছে।
৩. যাদের পেইজে লাইভ আছে।
৪. যাদের পেইজের পুর্বের পোস্ট এবং কমেন্টে বিশ্বাস যোগ্যতা আছে।
৫. ভালো রেসপন্স করে।
৬. ডেলাভারীর পরে টাকা চায়।

এবার আমি ক্লায়েন্টকে প্রশ্ন করি যে ৫ টি বিষয় আপনি নিজে অন্য পেইজ থেকে পন্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে খেয়াল করেন এর মধ্যে আপনার পেইজে কয়টি বৈশিষ্ট্য আছে।

ক্লায়েন্টের উত্তরঃ সর্বোচ্চ ১-২ টি।

এবার আমার উত্তর তাহলে আপনি আপনার ব্যবসার ক্ষেত্রে ১০০-১৫০ পন্য সেলের প্রত্যাশা রাখেন?

এই ঘটনা গুলো প্রায় সব নতুন উদ্দোক্তার মধ্যে খুজে পাই। আপনাদের জন্য পরামর্শ  নতুন ব্যবসার ক্ষেত্রে আগে পরিচিতি বাড়ান। পরে বিক্রি নিয়ে ভাবুন। যদি কিছু বিক্রি এই সময়ে পেয়ে যান সেটা আপনার সৌভাগ্য।

এবার আলোচনায় আসি অনলাইন ব্যবসা নিয়ে আলোচনায়।

আমাদের দেশে দু ধরনের অলনাইন ব্যবসা প্রচলিত।
১. ফেইসবুক কেন্দ্রিক
২. পূর্নাঙ্গ অনলাইন

Business plan

ফেইসবুক কেন্দ্রিকঃ

ফেইসবুক কেন্দ্রিক ব্যবসাটি আমাদের দেশের অধিকাংশ অনলাইন ব্যবসায়ীরা ব্যবহার করে থাকে। এটি একটি অল্প পূজিতে ভালো ব্যবসার মাধ্যম। কিন্তু এখানে গুরুত্বপূর্ণ স্টেপগুলো ফলো না করলে ফেইল করার সম্ভাবনাই বেশি। চলুন কিভাবে শুরু করতে হবে।

১. পন্য নির্বাচণঃ এটি গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ। আমাদের দেশের অধিকাংশ অনলাইন ব্যবসায়ীরা দুই ধরনের পন্য নিয়ে কাজ করেন।

  • পোশাক
  • বিউটি প্রোডাক্ট

যার ফলে মার্কেটে প্রচুর প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হয়। আর এই প্রোডাক্ট গুলোর ক্ষেত্রে আমাদের দেশের মানুষজন দোকানে গিয়ে পন্য কিনতেই পচ্ছন্দ করেন। আর অনলাইনে তখনই কেনে যদি কিছু ইউনিক কিছু পেয়ে থাকেন। তাই পন্য নির্বাচণ গুরুত্বপূর্ণ। এমন পন্য নির্বাচণ করুন যার মার্কেটে চাহিদা বেশি, প্রতিযোগিতা কম।

২. ব্রান্ডিংঃ পন্য নির্বাচনের পর এটি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। যা আপনার ব্যবসার ভবিষ্যৎ নির্বাচন করবে। তাই পেইজটি সুন্দর ভাবে সাজান।

একটি নিজস্ব লোগো অবশ্যই বানান। কোন কপি ডিজাইন নিবেন না, বা অনলাইন থেকে কারো লোগো নিবেন না। এটি অন্যায় এবং আপনার জন্য ক্ষতিকারক। আপনি এর জন্য কপিরাইট মামলায় জড়াতে পারেন। অপরদিকে অন্যের লোগো দিয়ে নিজের ব্যবসার পরিচয়, তাই এদিকে অবশ্যই গুরুত্ব দিন।

এরপর আপনার পেইজের জন্য একটি সুন্দর কাভার ফটো নির্বাচন করুন এবং এটি প্রত্যেকটি চলমান ইভেণ্টের উপর সুন্দর কাভার ফটো ডিজাইন করুন।

এরপর পেইজের about সেকশনটিকে সঠিক তথ্য দিয়ে তুলে ধরুন। যা আপনার ব্যবসার লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য ক্লায়েন্টের কাছে ফুটে ওটে এবং আপনার নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পায়।

এরপর ট্যাবগুলোকে পর্যায়ক্রমিকভাবে সাজান এবং সঠিক কল টু একশন বাটন যুক্ত করুন।

এবার পেইজে একটি সুন্দর শপ তৈরী করুন। যাতে করে আপনার ক্লায়েন্টরা পেইজে প্রবেশ করার পর আপনার পন্যগুলো দেখতে পারে। এটি ব্যবসার সেল বৃদ্ধি করে।

এছাড়া পেইজের রিভিঊ পেইজের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং অরগানিক রিচ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। তাই প্রত্যেক পন্য বিক্রয়ের পর ক্লায়েন্ট থেকে তার ফিডব্যাক নিন।

৩. কন্টেন্ট ম্যানেজম্যান্টঃ ফেইসবুক একটি সোস্যাল মিডিয়া। আর ফেইসবুক পেইজ থেকে ভালো কিছু পেতে অরগানিক রিচ পেতে গেলে এর বিকল্প নেই। আপনার পেইজে ব্যবসার প্রচারের জন্য ভালো মানের কন্টেন্ট তৈরী করুন। যেমনঃ
ক. ছবি
খ. ব্যানার
গ. ভিডিও
ঘ. লাইভ
ঙ. পোল
চ. কন্টেস্ট
ছ. অন্যান্য

Business management
প্রত্যেক কন্টেন্ট পাবলিশের ক্ষেত্রে অব্যশই ব্যবসার ব্র্যান্ডিং মাথায় রাখবেন। আর সর্বদাই ব্যবসার সাথে যায় এমন পোস্ট করা যাবে না। কারণ আপনার ক্লায়েন্ট প্রতিদিন আপনার থেকে পন্য কিনবেন না। পোস্টে ভ্যারিয়েশন নিয়ে আসবেন। যা আপনার পেইজে আপনার ক্লায়েন্টকে ধরে রাখে।

আর হ্যা শুধু কন্টেন্ট বানালেই হবে না। এগুলো সঠিক সময়মত পোস্ট করতে হবে। এমন সময়ে পোস্ট করবেন না, যখন আপনার ক্লায়েন্টরা আপনার পোস্টকে রিচ করবে না। প্রত্যেকদিন কমপক্ষে ১-৩ টি পোস্ট করুন। এবং পোস্টের সময় একই রাখুন।

৪. ম্যাসেজিং এবং কমেন্টঃ পন্য বিক্রয়ের ক্ষেত্রে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ক্লায়েন্টেদের সাথে কমেন্টে এবং ম্যাসেজে সর্বদা ভালো আচরণ করুন যেন তারা আপনার ব্যবসা থেকে একটি ভালো অভিজ্ঞতা লাভ করেন। আর একটা বিষয় অবশ্যই মনে রাখবেন ক্লায়েন্টকে আপনার পন্য কেনার জন্য চাপ প্রয়োগ করবেন না।

৫. ব্যবসার প্রমোশনঃ ব্যবসার প্রমোশনের ফেইসবুক ব্যবসার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এর জন্য একটি সঠিক action plan তৈরী করতে হবে এবং এটিকে বাস্তবায়ন করতে হবে। ফেইসবুক ব্যবসার ২ ভাবে প্রচার করা যায়। একটি পেইড, একটি নন-পেইড।

নন-পেইড মার্কেটিং এর মধ্যে রয়েছে
ক. ফেইসবুক গ্রুপ
খ. ফেইসবুক ফ্রেন্ডলিস্ট
গ. ফেইসবুক ব্যক্তিগত টাইমলাইন

এছাড়াও আপনি সেল বৃদ্ধির জন্য লোকাল মাল্টি ভেন্ডর প্লাল্টফর্ম ব্যবহার করতে পারেন।
ক. দারাজ খ. ইভ্যালি গ. পিকাবো ইত্যাদি

পেইড মার্কেটিং এর মধ্যে রয়েছে,
ক. ফেইসবুক এডস
খ. SMS মার্কেটিং

ফেইসবুক এডস ব্যবহারের ক্ষেত্রে ব্যবসার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, ক্রেতার অবস্থান এবং পন্যের ধরণ বুঝে বাজেট করুন। অবশ্যই ফেইসবুক বিজনেসের ক্ষেত্রে এই বাজেটটির কথা মাথায় রেখে ব্যবসায় আসবেন। অনথ্যায় মাঝ পথে থেমে যাবেন।

আরেকটি বিষয় মনে রাখবেন পেইজের লাইকারদের কথা সবসময় বিবেচনা করবেন। প্রত্যকটা এডসের জন্য বাজেটকে দুভাগে ভাগ করবেন। ১টি পেইজের লাইকারদের জন্য, অপরটি নতুন কাস্টমারের জন্য। কারণ যে ইতিমধ্যে আপনার পেইজ লাইক করেছে সে আপনার ব্যবসা সম্পর্কে ইতিমধ্যে জানে এবং আপনার সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখে। তাই এখানে সেল হবার সম্ভাবনা বেশি। আর এই পদক্ষেপ আপনার পেজের সেল বৃদ্ধি না করলেও অরগানিক রিচ বৃদ্ধি করে দিবে।

পরবর্তীতে এডস নিয়ে একটি বিস্তারিত আর্টিকেল লিখবো সেখানে বিস্তারিত লিখবো।

৬. এনালাইসিস এবং ট্রাকিংঃ এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি আপনার ব্যবসার অবস্থান ধরে রাখবে এবং আপনার ভুল গুলো তুলে ধরবে।

উদাহরণসরুপ, আমি কোন এডস পরিচালনা করলে ক্লায়েন্টদের থেকে পাওয়া মেসেজগুলোকে নিয়ে একটি মাসিক পর্যালোচনা করি। এখানে কিছু বিষয় বিবেচনা করি।
ক. আমাকে কয়জন ব্যক্তি মেসেজ করেছে।
খ. আমার থেকে কয়জন কিনেছে।
গ. আমার থেকে কয়জন কেনেন নি।
ঘ. আমার থেকে কেন কেনেন নি।
ঙ. আমার সেল বৃদ্ধিতে নতুন কি কি পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।

এই ধরনের এনালাইসিস আপনাকে একটি পূর্নাঙ্গ ধারণা দিবে।

Business analysis

এছাড়াও আমি আমাকে মেসেজ করা প্রত্যেকটি ক্লায়েন্টের একটি লিস্ট করি যারা আমার থেকে পন্য ক্রয় করেছে এবং করেনি তাদের একটি লিস্ট করি এবং পুনরায় পন্যের সাথে ক্লায়েন্টের কানেকশন বিবেচনা করে মার্কেটিং করি।

উপরে উল্লেখিত এই বিবেচনা গুলো আপনার ফেইসবুক ব্যবসাকে সচল রাখবে এবং সাফল্যমন্ডিত করবে। তাই এটি চলমান রাখার চেষ্টা করবেন।

পূর্ণাঙ্গ অনলাইন ব্যবসা

পূর্নাঙ্গ অনলাইন ব্যবসার ক্ষেত্রে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। যা আপনাকে সঠিক ভাবে মেন চলতে হবে। তবেই ব্যবসাকে একটি ভালো অবস্থানে নিয়ে যেতে পারবেন।

চলুন পূর্ণাঙ্গ অনলাইন ব্যবসার ধাপগুলো আলোচনা করা যাক।

১. পণ্য নির্বাচণঃ এই ধাপটি ফেইসবুক বিজনেসের মতই। পন্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে একই ধাপ ফলো করুন।
২. ওয়েবসাইট/ এপসঃ আপনার ব্যবসার জন্য একটি সুন্দর ওয়েবসাইট তৈরী করুন। এখানে একটি সুন্দরভাবে আপনার পন্য গুলোকে উপস্থাপন করুন। এটি অনেকটা অফলাইনের দোকানের মত। দোকান যেভাবে লাইটিং, ডেকোরেশন প্রভৃতি করে দোকনটিকে কাস্টমারের কাছে আকর্ষনীয় করে তোলে সেইভাবে আপনি অনলাইনের ব্যবসার জন্য একটি আকর্ষনীয় ওয়েবসাইট তৈরী করুন। ওয়েবসাইট তৈরীর সময় ওয়েবসাইটের স্পিডের দিকে খেয়াল রাখবেন যেন ৩-৫ সেকেন্ডের মধ্যে ওয়েবসাইটটি লোড হয়ে যায়। অনথ্যায় ক্লায়েন্ট বিরক্ত বোধ করবেন। আপনার থেকে পন্য ক্র্য না করেই চলে আসবেন।

এছাড়াও আপনার বাজেট ভালো মানের থাকলে ওয়েবসাইটের পাশাপাশি একটি মোবাইল এপস তৈরি করতে পারেন।

৩. সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংঃ আপনার ব্যবসার প্রসার এবং প্রচারের জন্য জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে আপনার ব্যবসার জন্য পেইজ তৈরি করুন। সেখানে আপনার পন্যের জন্য ওয়েবসাইটের অনুরূপ একটি সপ সোস্যাল মিডিয়া একাউন্ট গুলোতে তৈরী করুন।

যেসব সোস্যাল মিডিয়াতে একাউন্ট খুলবেন?
ক. গুগল মাই বিজনেজ
খ. ফেইসবুক
গ. ইন্সটাগ্রাম
ঘ. ইউটিউব

পরবর্তীতে সোস্যাল মিডিয়া সম্পর্কিত আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

৪. ট্রাকিং টুলস ইন্সটল ও ম্যানেজম্যান্টঃ আপনার ব্যবসার কাস্টমারদের গতিবিধি নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন ধরনের ট্রাকিং টুলস আপনার ওয়েবসাইটে ইন্সটল করুন। উল্লেখযোগ্য ট্রাকিং টুলস সমূহঃ
ক. গুগল ট্যাগ ম্যানেজার
খ. গুগল এনালাইটিক্স
গ. গুগল সার্চ কনসল
ঘ. ফেইসবুক পিক্সেল

এছাড়াও অনেক টুলস রয়েছে ব্যবসার উপর ভিত্তি করে আপনি আরো বিভিন্ন টুলস ব্যবহার করতে পারেন।

SEO

৫. এসইওঃ এটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ। এসইও আপনার ওয়েবসাইটের অর্গানিক কার্জপদ্ধতি বৃদ্ধি করবে। এবং সার্চ ইঞ্জিন থেকে আপনার ব্যবসা সম্পর্কিত ক্লায়েন্ট আপনার ব্যবসায় ডাইভার্ট করবে।

৬. Ads management: এটিও একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ। সঠিক Ads প্লাটফর্ম সঠিক ভাবে ব্যবহার করে আপনি সহজেই আপনার ব্যবসাকে সঠিক অবস্থানে নিয়ে যেতে পারবেন। উল্লেখযোগ্য Ads প্ল্যাটফর্ম সমূহ।
ক. Google ads
খ. Facebook Ads
গ. Instagram Ads
ঘ. YouTube Ads

এডস মিডিয়াগুলো ব্যয়বহুল, তবে অনলাইন ব্যবসার জন্য অনস্বীকার্য। তাই Ads মিডিয়া গুলো ব্যবহারের জন্য ব্যবসার পরিকল্পনার জন্য হাতে ভালো বাজেট রাখবেন। অন্যথায় মাঝ পথে থেমে যাবেন।

৭. ইমেইল মার্কেটিংঃ ই-মেইল মার্কেটিং অনলাইন ব্যবসার আরেকটি প্রয়োজনীয় মাধ্যম আপনার ক্লায়েন্টদের মাসে অত্যন্ত একটি ই-মেইল পাঠান।

৮. SMS মার্কেটিংঃ SMS এর মাধ্যমে আপনার ক্লায়েন্টের আপনার ব্যবসার আপডেট গুলো জানান।

৯. Affiliate মার্কেটিংঃ Affiliate মার্কেটিং সেল বৃদ্ধি করার অন্যতম মাধ্যম। এটিকে চাইলে ব্যবহার করুন।

১০. এনালাইসিসঃ প্রত্যেক সপ্তাহে অথবা মাসভিত্তিক আপনার ব্যবসার অবস্থান নিয়ে আলোচনা করুন, সমস্যা গুলো খুজে বের করুন, সমাধানের উপায় খুজুন।

আজকের আর্টিকেলটিতে অনলাইন ব্যবসা নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ ধারণা দেবার চেষ্টা করেছি। আশা করছি এই বিষয়গুলো মেনে চললে আপনার ব্যবসায়ের অনলাইনে একটি ভালো অবস্থান তৈরী করতে পারেন। ভালো লাগলে আপনার পরিচিত অনলাইন উদ্দোক্তাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন।

আপনার অনলাইন ব্যবসা এগিয়ে যাক অনেক দূর, এই প্রত্যাশা রাখছি।

ধন্যবাদ।