দিন দিন বেড়ে চলেছে ফেইসবুকের জনপ্রিয়তা আর তার সাথে ফেইসবুকের বিজনেস ফিচার আমাদের দিয়েছে ঘরে বসে একটি ফেইসবুক পেইজ খুলে অল্প পুজিতে নিজের ব্যবসাকে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ। আর আপনারা যারা ফেইসবুক পেইজ খুলে ফেইসবুকে ব্যবসা শুরু করেছেন তাদের কাছে একটি পরিচিত নাম হচ্ছে ফেইসবুক বুস্টিং বা ফেইসবুক এ্যাডস। আমাদের দেশে প্রায়শই ফেইসবুক বুস্টিং-এর সময় আমরা ৩য় কোন ব্যক্তি বা এজেন্সিকে হায়ার করে থাকি নিজেদের পেইজের এ্যাডস বা বুস্ট দেওয়ার জন্য। আমাদের আজকের পোস্টটিতে ৩য় ব্যক্তি বা এজেন্সির মাধ্যমে ফেইসবুক বুস্ট করার পূর্বে কি কি বিষয় মাথায় রাখা উচিত এই সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আপনাদের সাথে আলোচনা করবো। তাহলে চলুন শুরু করা যাক —-

১. কম রেট বা বুস্টিং চার্জঃ

আমাদের দেশে প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে ই-কর্মাসের পরিধি। ফেইসবুকে যারা প্রতিনিয়ত তার বিজনেস বুস্ট করে থাকেন, তাদের বেশিরভাগই ই-কর্মাস ব্যবসায়ী, এছাড়া অন্যরাও বুস্ট করে থাকেন। আর তাদের মধ্যে অনেকের কাছেই মাস্টার কার্ড বা ফেইসবুক সাপোর্টেড ডুয়েল কারেন্সির কার্ড না থাকার কারণে তাদেরকে ৩য় কোন ব্যক্তি বা কোন এজেন্সিকে হায়ার করতে হয়। আর ৩য় ব্যক্তিকে হায়ার করতে গিয়ে যে বিষয়টা সবার আগে মাথায় আসে সেটা হলো কত টাকা থেকে শুরু করবেন।

যেহেতু ফেইসবুকে সর্বনিম্ন দিনে ১ ডলারের এ্যাড দেওয়া যায়, তাই আপনারা বুস্ট করার সময় ডলার ও সার্ভিস চার্জ কোথায় কম পাওয়া যায় এটা খুজে থাকেন। আর কোন ৩য় ব্যক্তি বা এজেন্সি সার্ভিসচার্জসহ প্রতি ডলার সর্বনিম্ন ৮০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১২৫ টাকা চার্জ করে থাকেন। স্বভাবতই আপনারা যারা ফেইসবুকে বুস্ট করান তারা প্রতি ডলার সার্ভিস চার্জসহ ৮০-৯০ টাকা প্রতি ডলার বুস্ট করাতে সাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। কিন্তু এর মানে এই না যে, প্রতি ডলার সার্ভিসচার্জসহ ১২০ টাকা যে চার্জ করেন সে তার সার্ভিস সেল করতে পারছেন না। যে ৮০-৯০ টাকা চার্জ করে সেও সেল করে যে ১২০ টাকা সেল করে সেও তার সার্ভিস সেল করে। (কেউ কেউ ১০০ টাকা আবার কেউ কেউ ১১০ টাকাও নিচ্ছেন)।

এখন বুস্ট করার সময় আপনার মাথায় যে প্রশ্ন গুলো ঘুরপাক খাচ্ছে –
সার্ভিসচার্জসহ ৮০ টাকা ১ ডলারের মূল্য নিচ্ছে, তাহলে ১২০ টাকা দিয়ে বুস্ট করার তো কোন দরকার নেই। ৪০ টাকা এমনিতেই বেচে যাবে।

আপনার জন্য আমার প্রশ্ন?

ভাই বাজারে ১ ইউএস ডলারের মূল্য ৮৩ টাকা একবার একটু ভেবে দেখেছেন কি ৮৩ টাকার ডলার কিনে সে কেন আপনাকে ৮০ টাকায় সার্ভিসচার্জ সহ সেল করবে।

এবার আপনি বলতে পারেন যে, আমি তো স্ক্রিনশট নেই, যিনি কাজ করে দিচ্ছেন তিনিতো মিথ্যে বলছেন না!
তাহলে চলুন আপনার ভ্রমটাকে ভেঙ্গে দেই। চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই, আমি বিষয়টা সহজ করছি-
যারা ৮০ টাকা করে নিচ্ছেন তারা সিঙ্গাপুরের ডলার বা অন্য কোন দেশের ডলার কারেন্সীতে ফেসবুককে টাকা দিয়ে থাকে। যা বাংলাদেশের ৫০-৬০ টাকা এর সমতুল্য। এর মানে তিনি আপনার থেকে প্রায় ২০-৩০ টাকা এর মত লাভ করেন। যারা ৯০ টাকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকেন তারাও অনেক ক্ষেত্রে এ কাজ করেন এবং তাদের লাভ হয় প্রায় ৩০-৪০ টাকা। আপনি স্ক্রিনশট নিচ্ছেন এবং সেখানে শুধু ডলার এর চিহ্ন থাকে, তাই আপনি বুজতে পারেন না এটি কোন ডলার।

এখন আপনি হয়ত ভাবতে পারেন, কম টাকায় বিজ্ঞাপনতো হয়ে গেল ক্ষতি কি?
কোন ক্ষতি নেই, Singapore Dollar আপনি যা রেজাল্ট পাবেন US Dollar এ বিজ্ঞাপন দেয়ার কারণে আপনি এর চাইতে একটু বেশি রেজাল্ট পাবেন, কারণ US Dollar এর মান Singapore Dollar এর চাইতে বেশি। সিদ্ধান্ত আপনার উপর। এখানে কোন ক্ষতি নেই। কিন্তু বুস্ট করার পূর্বে কিন্তু আপনি বুস্ট করার সময় মূল্যটা ইউএস ডলারের সাপেক্ষেই মূল্যের বিচার করেছেন।

তাই কোন ডলারে বুস্ট করেছেন তা অবশ্যই জেনে নিবেন। মনে রাখবেন, কেউ ফ্রি-তে আপনার জন্য কিছু করবে না, তার লাভ রাখবেই। কম মূল্যে কিছু পেয়ে গেলেন, এর মানে এই নয় যে আপনি লাভবান হয়েছেন। যে আপনাকে ইউএস ডলার বলে সিঙ্গাপুর ডলারে বুস্ট করিয়ে দিয়েছে তার কাছ থেকে বুস্টিং করে ভালো ফলাফল আশা করাটাই বোকামী।

অপরদিকে, যারা ১০০ টাকায় বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন তাদের বিষয়টা প্রায় একই। তারা US Dollar এ বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন এবং প্রতি ডলার এ প্রায় ২০ টাকা লাভ রাখছেন। আবার, যারা ১২৫ টাকায় বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন, তারা বিজ্ঞাপন দেয়ার সাথে সাথে আরো কিছু সার্ভিস দিচ্ছেন তাই একটু বেশি রাখছেন।

এ অবস্থায় আমাদের মনে একটা কথা অনেক সময় আসে, ৮০ টাকার ডলার ৯০ টাকা হিসেবে রাখলেইতো হয়, এতো বেশি রাখার দরকার কি
এ প্রশ্নের উত্তর এর জন্য নিচের বিষয়গুলো আপনাকে একটু ভাবা উচিত –

ক. ফেসবুক এ বিজ্ঞাপন এর কাজ করেন এমন একজন ব্যবসায়ী যখন ব্যবসায় শুরু করেন তখন ক্লায়েন্ট পাওয়ার জন্য তাকেও বিজ্ঞাপন দিতে হয় ফেসবুক এ। অনলাইন এ সক্রিয় থাকতে হয়, কখনো যদি কোথাও দেখে কেউ এ ধরণের সার্ভিস খুঁজছেন তার সাথে যোগাযোগ এর চেষ্টা করতে হয়। ক্লায়েন্ট কে নিজের সার্ভিস বোঝাতে হয়, কেন তার থেকেই সার্ভিস নেবেন তা বোঝাতে হয়, বিভিন্ন সময় ক্লায়েন্ট এর বিভিন্ন বিষয় এর উত্তর দিতে হয়, ফোনে কথা বলতে হয় ইত্যাদি ইত্যাদি। এসব না করলে তিনি ক্লায়েন্ট পাবেন না বা ক্লায়েন্ট ধরে রাখতে পারবেন না। এসকল কাজে তার সময় এবং অর্থ এর খরচ হয়। সে সময় এর মূল্য এবং অর্থ তাকে তার ব্যবসায় এর থেকে বের করতে হয়। নয়ত তার পক্ষে ব্যবসায় করা সম্ভব হবে না।

খ. ধরুন, বিজ্ঞাপনদাতা প্রতি মাসে ১০০০ ডলার (৮০,০০০ টাকা) এর বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকেন। এর মানে তাকে ৮০,০০০ টাকা বিনিয়োগ করতে হচ্ছে। এখানে তেমন বড় ক্ষতি এর সুযোগ নেই, কিন্তু প্রতি মাসে এ ৮০,০০০ টাকা ক্লায়েন্ট এর মাধ্যমে তুলতে হবে এবং আবার ৮০,০০০ টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। এ পর্যন্ত বিষয়টি অনেক সহজ মনে হচ্ছে। কারণ, প্রতি মাসে ২০,০০০ টাকা লাভ মনে হচ্ছে সহজেই, কিন্তু বিষয়টি একটু অন্যরকম। টাকা থাকলেই হবে না, এ টাকাকে ডলার এ রুপান্তর করাতে হবে। যদি ব্যাংক এর কথা ভাবেন, খুব সহজেই ডুয়েল কারেন্সি মাষ্টার কার্ড পাওয়া যায় না, ব্যাংক এর খরচ আছে, ডলার কিনতে গেলে একটু বেশি টাকা দিয়ে কিনতে হয়, কার্ড এর খরচ ইত্যাদি আছে। আবার যদি মনে করেন, ডলার অন্য ভাবে আসছে, তখন অনেক ক্ষেত্রেই ডলার কিনতে ডলার এর রেট এর থেকে অধিক অর্থ দিতে হচ্ছে। ধরুন, ৮০ টাকার ডলার ৮৫ টাকা বা কিছু ক্ষেত্রে ৯০ টাকা।

গ. তিনি আপনার জন্য কাজ করছেন, আপনার মত করে বিজ্ঞাপন দিয়ে দিচ্ছেন, এর হিসেব রাখছেন। এ সকল কাজ এর জন্য সময়, তার আসবাবপত্র, কম্পিউটার, বিদ্যুৎ ইত্যাদি ব্যবহার করছেন। এ সকল খরচ বাদ দেয়ার পরে তিনি লাভ এর টাকা এর কথা ভাবার সুযোগ পাচ্ছেন। যত সহজে প্রতি ডলার এ ২০ টাকা লাভ দেখা যায়, আসলে সেটা তত সহজ নয়। শেষ পর্যন্ত ২০ টাকা লাভ থাকে না।

ঘ. অনেক সময়, ফেসবুক মাষ্টার কার্ড ব্লক করে দেয় বা অনেক সময় ক্লায়েন্ট এর কপি রাইট বিজ্ঞাপন এর জন্য ফেসবুক অ্যাড অ্যাকাউন্টও ব্যান হয়ে যায়। এসকল ক্ষতিতো আছেই।

তাহলে এখন আপনি ভাবছেন তাহলে আপনি প্রতি ডলার সার্ভিসচার্জসহ কত টাকার বুস্টিং করবেন?
আপনি ১০০ টাকা থেকে শুরু করতে পারেন। কিন্তু খুব ভালো সার্ভিস পেতে ১১০-১২৫ টাকার সার্ভিস নিতে পারেন। কিন্তু অবশ্যই বুস্টিং কারেন্সী জেনে নিবেন।

২. সঠিক অডিয়েন্স নির্বাচনঃ

সঠিক অডিয়েন্স একটি বুস্ট বা এ্যাডসের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনারা বুস্ট করার সময়ই অডিয়েন্স সিলেকশনের সময় সঠিক অডিয়েন্স সিলেক্ট করে থাকেন না। আবার অনেক সময় সঠিক অডিয়েন্সের জন্য ৩য় পক্ষ বা এজেন্সির উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকেন। একটা বিষয়টা একবার ভেবে দেখা উচিত যে ব্যবসাটা কিন্তু আপনার, আপনার ব্যবসার অডিয়েন্স বা ব্যবসার লক্ষ্য কিন্তু আপনিই সবথেকে ভালো জানেন। আর সব সময় যে, ৩য় পক্ষ আপনার জন্য সঠিক অডিয়েন্স ঠিক করতে পারবে এমনটা নয়। তাই ভালো ফলাফলের জন্য বুস্ট বা এ্যাডস দেওয়ার সময় ৩য় পক্ষের সাথে আপনার অডিয়েন্স এবং ব্যবসার লক্ষ্য সম্পর্কে বিষদ আলোচনা করা নেওয়া উচিত।

৩. বেশি রিচ/বিক্রয়

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি নিয়ে আমরা ভেবে থাকি তা হচ্ছে, রেসপন্স বা বিক্রয় এর পরিমাণ। কেউ কেউ রিচ বেশি চায়, কেউ কেউ বিক্রয় বেশি চায়। রিচ বা বিক্রয় বেশি হলে বিজ্ঞাপনদাতা ভালো, রিচ বা বিক্রয় কম হলে বিজ্ঞাপনদাতা খারাপ (অন্য কোন বিজ্ঞাপনদাতাকে খুজতে হবে)।

মনে রাখবেন, রিচ এবং বিক্রয় এ দুটো বিষয় টার্গেট, প্রোডাক্ট এবং ভোক্তাদের পছন্দ অপছন্দ এর উপর নির্ভর করে। এ দুই বিষয় এর জন্য, আমি একজন অভিজ্ঞ ডিজিটাল মার্কেটার হিসেবে আপনাকেই (যিনি ব্যবসায় এর মালিক) দায়ী করব, বিজ্ঞাপনদাতাকে নয়।

কারণ, ভোক্তা এর পছন্দ এবং অপছন্দ এর কথা ভেবেই পণ্য নিয়ে কাজ করা উচিত আপনার, আপনার পণ্য কোন ধরণের ভোক্তা এর জন্য তা আপনার জানা উচিত। আপনি বিজ্ঞাপনদাতাকে বলে দিবেন টার্গেট কি হওয়া উচিত, কোন শহর, কোন লিঙ্গ এবং কোন বয়স এ সকল কিছু আপনি বলে দিবেন। বিজ্ঞাপনদাতা আপনার ব্যবসায় এর মার্কেটার নয় যে তিনি এসকল কাজ করে দিবেন, তার উপর নির্ভর করে থাকলে আপনাকে আজ নয়ত কাল সমস্যার সম্মুখীন হতেই হবে।

একটু ভাবুন, কোন কারণে আপনাকে যদি বিজ্ঞাপনদাতা পরিবর্তন করে নতুন বিজ্ঞাপনদাতা এর কাছে যেতে হয় এবং এতদিন কিভাবে বিক্রয় হয়েছে, কি টার্গেট হতো এসব কিছু যদি আপনি না জেনে থাকেন তখন নতুন বিজ্ঞাপনদাতা এর মাধ্যমে আবার নতুন টার্গেট হয়ে যেতে পারে এবং আপনার বিক্রয় কমেও যেতে পারে, তাই নিজের ব্যবসায় এর জন্য, নিজের জন্য সকল তথ্য নিজের জানা উচিত।

দুই পক্ষ এর কথা ভেবে সবসময় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন, তাহলে সবসময় ভালো কিছু হবে, নয়ত আজ ভালো কিছু হলেও আগামীকাল ভালো হবে কিনা এ নিয়ে অনেক সন্দেহ রয়েই যায়।

রিচ কমে যাওয়ার পিছনে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কাজ করে সেটা হচ্ছে সঠিক এ্যাডস ইমেজ। আপনার বুস্টের সময় অবশ্যই লক্ষ্য রাখবেন যে, আপনার নির্বাচিত ইমেজটি আসলে এ্যাডস রিলেটেড কিনা, অথবা এটা পরিস্কার নাকি ঘোলাটে এবং আপনার ইমেজে টেক্সট বা লেখার ব্যবহার কতটা অংশ জুড়ে। অধিক টেক্সট আপনার বুস্ট বা এ্যাডসের রিচ কমিয়ে দেয়। উল্লেখ্য ফেইসবুক মোট ইমেজের ২০% বা এর নিচে টেক্সট ব্যবহার করার পরামর্শ দেয়। কিন্তু আপনি সর্বোচ্চ ৪০% পর্যন্ত টেক্সট ব্যবহার করতে পারবেন কিন্তু ২০% অতিক্রম করার পর থেকে আপনার এ্যাডসের রিচ কমতে থাকবে।

নোট – একজন বিজ্ঞাপনদাতা এর উপর নির্ভর না করে, এ বিষয়গুলো নিজে জেনে রাখা অনেক বেশি জরুরী। ভবিষ্যৎ এর কথা ভেবে হলেও কিভাবে বিজ্ঞাপন দিতে হয়, কিভাবে রিসার্চ করতে হয়, কিভাবে নতুন করে টার্গেট করে আবার বিজ্ঞাপন দিতে হয় এসব বিষয় শেখার চেষ্টা করুন। শিখেই নিজেকে কাজ করতে হবে এমন নয়, অন্য কেউ কাজ করুক, কিন্তু আপনি সঠিক এবং ভুল বিষয়টি বুঝবেন এবং আপনাকে কেউ ঠকাতে পারবে না।