বর্তমানে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশে ফেইসবুক ব্যবসায়ীর সংখ্যা এখন প্রচুর। অনেকেই শুধু মাত্র ফেইসবুকের মাধ্যমে তার ব্যবসাকে দ্রুত সফল করে ফেলছে। যার পিছনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হচ্ছে ফেইসবুক এডস। কিন্তু এখন প্রায়শই দেখা যাচ্ছে অনেকের ফেইসবুক পেইজকে ফেইসবুক অথোরিটি ফেইসবুকে এডস দেওয়া থেকে রেস্ট্রিকটেড করে দিচ্ছে। যার ফলে একটি সম্ভাবনাময় ব্যবসা মুখ থুবরে পড়ছে।

আজকের আর্টিকেলে আমি কেন এই সমস্যা সম্মুখীন হচ্ছেন তা নিয়ে আলোচনা করবো।

চলুন শুরু করা যাক

১. অল্প টাকায় এডঃ

বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে অনেক এজেন্সীকে দেখা যায় যারা ৭০-৮০ টাকায় ফেইসবুকে এডস দিয়ে দেয়। আমরা এসব ক্ষেত্রে অল্প টাকা দেখে তাদের সার্ভিস নিয়ে থাকি।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই সব ব্যক্তিরা স্প্যামিং করে থাকি। এখানে ২ ধরনের স্প্যামিং সংগঠিত হয়।

Why FAcebook restricted to run Ads from Pages

ক. এড একাউন্ট এর পেমেন্ট পরিশোধ না করাঃ

ফেইসবুকে দু ভাবে টাকা পেমেন্ট করা যায়, একটি প্রিপেইড অপরটি পোস্টপেইড। যারা৷ এডস এজেন্সী তাদের মধ্যে বেশির ভাগই পোস্টপেইড এডস একাউন্ট ব্যবহার করে। এই ধরনের এডস একাউন্টে মাসের শেষে যত টাকা পুরো মাসে খরচ হয় তা একবারে চার্জ করে নেয়। ফলে এজেন্সীর পুরো একমাস টাকা বাকি রাখার সুবিধা থাকে। প্রায়ক্ষেত্রেই স্প্যামাররা ফেইক একাউন্ট খুলে এধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করে এবং মাসের শেষে এড একাউণ্টের টাকাটি পরিশোধ করে না। ফলে ফেইসবুক এডস একাউন্টটি ডিএকটিভ করে দেয়, সাথে সংশ্লিষ্ট পেইজ গুলো কেও প্রায় ক্ষেত্রে অফ করে দেয়।

করণীয়ঃ

  • এডস দেবার প্রথমে জেনে নিবেন তার এড একাউণ্ট প্রিপেইড নাকি পোস্টপেইড।
  • প্রিপেইড বললে স্ক্রিনশট চেয়ে নিবেন একাউন্টের ব্যালেন্স আছে কিনা সেটা দেখার জন্য।
  • আর প্রোস্টপেইড হলে তার পূর্বের ট্রানসাকাশন দেখে নিবেন, যে সে নিয়মিত ফেইসবুকে টাকা পরিশোধ করে কিনা?

খ. কুপন ব্যবহারঃ

মাত্রারিক্ত কুপন ব্যবহার করে একই পেইজে বারবার এডস দিলে ফেইসবুক কর্তৃপক্ষ সেই পেইজের এডস একসেস বন্ধ করে দেয়। কারণ এই পেইজে দেওয়া এডসগুলো থেকে ফেইসবুক লাভবান হয় না। পাশাপাশি ফেইসবুক নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে তার স্পেন্ডের উপর নির্ভর করে মাসে বা বছরে ২-৩ টি এডস কুপন দিয়ে থাকে, যা তারা শুধু ওই ব্যক্তিকে সেটি অফার করে। কিন্তু অসাধু ব্যক্তিরা তা বাজেভাবে ব্যবহার করে।

২. আনওথোরাইড এডসঃ

অনেক ধরনের এডস রয়েছে যা ফেইসবুক কমিউনিটির বিপক্ষে, যেমন ধরুন ড্রাগস, মেডিসিন, ড্যাটিং, এলকোহল ইত্যাদি। কিন্তু ভালো পেইজ হলে (যেগুলো তে পুর্বে রেগুলার এডস দেওয়া হয়), সেই পেইজ গুলোতে এই এডসগুলো কিছু ট্রিক্স মেনে দেওয়া যায়। যা কিছু সময় পেইজে থেকে অফ হয়ে যায়। এই ধরনের এডস চালানোর জন্য এই কম্পানীগুলো এডস এজেন্সীগুলো কে ভালো অফার করে থাকে। আর এডস এজেন্সী গুলো ক্লায়েন্টের পার্মিশন ছাড়াই চুপিসারে এই এডস গুলো তাদের ক্লায়েন্টের পেইজ থেকে রান করে। যেহতু এই এডস গুলো এডস আকারে এডস ম্যানেজার থেকে পোস্ট করা হয়, তাই পেইজে এই এডসটি নরমাল পোস্ট আকারে শো করে না, আর ক্লায়েন্টও বিষয়টি সহজে বুঝতে পারে না। যার ফলে একটি নির্দিষ্ট সময় পর ফেইসবুক এডস দেওয়া বন্ধ করে দেয়।

করনীয়ঃ

  • এজেন্সীকে এডস শেষ হওয়া মাত্র পেইজ থেকে রিমুভ করে দেওয়া।
  • এজেন্সীর সাথে কানেক্ট থাকা অবস্থায় প্রতিনিয়ত ফেইসবুক এডস সম্পর্কিত নোটিফিকেশন চেক করা।
  • পেইজের এডস সেন্টার থেকে চলমান এডস গুলো দেখা।
  • বিশস্ত এজেন্সী না হলে তার এডস একাউন্টের পারমিশন নিয়ে নিজের এডস নিজে দেওয়া, বা এডস এজেন্সীকে দিয়ে নিজের প্রোফাইল থেকে করিয়ে নেওয়া।

৩. অপ্রাসঙ্গিক এডস দেওয়াঃ

এই ধরনের এডস পেইজ লাইক বাড়ানোর জন্য বেশি দেওয়া হয়। ফেইসবুক পেইজ লাইক এডস ব্যবসার ধরনের উপর নির্ভর করে কাজ করে। সঠিক নিয়ম মেনে এডস দিলে প্রতি ১ ডলারে গড়ে ৫০-২০০ টি পেইজ লাইক আসে। কিন্তু আমাদের দেশের বিজনেসম্যানরা এত কম লাইকে খুশি থাকেন না, তাই এডভার্টাইজারদের চাপ প্রয়োগ করেন বেশি লাইকের জন্য। এক্ষেত্রে ক্লায়েন্টকে খুশি করতে এডভার্টাইজাররা অপ্রাসঙ্গিক এডস দেয়।

যেমন, ধরুন আপনার পেইজটি একটি ক্লোথিং পেইজ। স্বভাবতই এখানে আপনার ব্রান্ড সম্পর্কিত বিষয়গুলো এই পেইজের লাইক এডসের জন্য ব্যবহৃত হবে। কিন্তু বেশি লাইক নিয়ে আসতে এডভার্টাইজার একটি এড দিলেন “অবশেষ মুখ খুললেন পরিমনি, পরিমণির সর্বশেষ আপডেট জানতে আমাদের পেইজটি লাইক করুন”।

যা আপনার ব্যবসার সাথে অপ্রাসঙ্গিক। এই এডসটি ক্যাম্পেইন চলাকালীন বা ক্যাম্পেইন শেষে অবশ্যই রিজেক্টেড হবে। এই ধরনের এডস পেইজের এডস রেস্ট্রিকশনের অন্যতম কারণ।

করনীয়ঃ

এধরনের এডস দেওয়া থেকে বিরত থাকা এবং এডভার্টাইজারকে বিরত রাখা।

৪. অতিরিক্ত এডস রিজেক্টঃ

অনেক সময় এডভার্টাইজার না বুঝে ফেইসবুকে বিভিন্ন অপ্রাসঙ্গিক গোলে এডস সেট করেন বা একটি এডস বারবার রিজেক্ট হবার পরেও তা বারবার দেবার চেষ্টা করেন। এতে করে ফেইসবুক ads algorithm সমস্যার সম্মুখীন হয়, আর তৎক্ষনাক পেইজ এবং এডস একাউন্টের এডস একসেস বন্ধ করে দেয়।

করনীয়ঃ

দক্ষ এডভার্টাইজারদের দিয়ে এডস দেওয়া

উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো পেইজের এডস একসেস বন্ধ করে দেবার প্রধান কারণ। এই বিষয়গুলো প্রত্যেক ফেইসবুক ব্যবসায়ীর অবগত থাকা প্রয়োজন। এই ধরনের সমস্যায় প্রায়শই ফেইসবুক পেইজের একসেস পুনরায় দিয়ে থাকে না।

তাই এখন থেকে সচেতন হউন। নিয়ম বুঝে এডস দিন। আপনার ব্যবসার জন্য শুভকামনা রইলো।