ব্যবসা করছেন কিন্তু কখনোও ডিজিটাল মার্কেটিং এর কথা ভেবছেন কি? যদি না ভেবে থাকেন, তবে চলুন জেনে নেই ব্যবসার জন্য কতটা প্রয়োজনীয়।
ডিজিটাল মার্কেটিং কি?
কোন ব্যবসার পন্য বা সেবা সমূহকে বিজ্ঞাপনসহ বাজার গবেষনার মাধ্যমে বিক্রয় করার প্রক্রিয়াকেই মার্কেটিং বলে। ঠিক একইভাবে ডিজিটাল মিডিয়া ও ডিজিটাল প্রযুক্তি কে ব্যবহার করে অনলাইন/ইন্টারনেট এর মাধ্যমে পণ্য বা সেবার বিক্রয় কাজ পরিচালনা করার পদ্ধতিকে ডিজিটাল মার্কেটিং বলা হয়। আর বর্তমান সময়ে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ডিজিটাল মার্কেটং এর চাহিদাও বেড়ে চলেছে প্রতিনিয়ত।
ডিজিটাল মার্কেটিং কেন ?
বর্তমান যুগ তথ্য প্রযুক্তির যুগ। তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে আমারা সবাই এগিয়ে যাচ্ছি প্রযুক্তির সাথে। সময়ের পরিবর্তনে সবকিছুই প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে উঠছে। আর এই তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে আমরা যে কোন কাজ খুব সহজেই করতে পারছি। আর সেই সাথে আমরা ও সময়ের সাথে নিজেদের মিলিয়ে নিতে পারছি।
যেমন আগে আমরা কোন পণ্য ক্রয় করতে হলে বাজারে/মার্কেট এ যেতে হতো। এখন আমরা ঘরে বসেই নিজের ইচ্ছে অনুযায়ী পণ্য ক্রয় বিক্রয় করতে পারি খুব সহজেই।
চলুন সুবিধাগুলো জেনে নেওয়া যাক।
১. ঘরে বসেই মার্কেটিং:
ডিজিটাল মার্কেটিং নামটা শুনলেই মনে হয় ইলেক্ট্রনিক কোন কিছু আছে । এক কথাই বলা যায় ইলেক্ট্রনিকমিডিয়া যেমনঃ সোশ্যাল মিডিয়া, ফেসবুক , গুগল, ওয়েবসাইট, ভিডিও, টুইটার , ইমেল ইত্যাদি ব্যবহার করে পণ্য বা সার্ভিস প্রচার করা।
এর মাধমে এক সাথে বিভিন্ন কাজ আলাদা আলাদা ভাবে করা যায় । ডিজিটাল মার্কেটিং এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে আপনার কাস্টমারদের সকল পছন্দ অপছন্দ আপনি যেকোনো জায়গায় বসে জানতে পারবেন । এমনকি কোন নতুন ব্যক্তিকে কাস্টমার এ রুপান্তরিত করতে পারবেন । ব্যবসায় এর সাথে কাস্টমারদের একটি ভালো সম্পর্ক তৈরি ইত্যাদি সম্ভব ডিজিটাল মার্কেটিং এর দ্বারা।
২. কাস্টমার টার্গেটিং:
ডিজিটাল মার্কেটিং এর সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার গুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে কাস্টমার টার্গেটিং। একবার ভেবে দেখুন আমরা যে প্রচলিত মার্কেটিং বলতে আসলে কি বুঝাচ্ছি?
পোস্টার ,ব্যানার ,লিফলেট ,বিলবোর্ড ,মাইকিং ,দেয়াল লিখন ,অফিস ভিজিট ইত্যাদি। এবার একটা কথা বলুন যতগুলো পদ্ধতির কথা বললেন , এদের মধ্যে কোন একটি পদ্ধতি কি আপনি টার্গেট করে আপনার মার্কেটিং করতে পারবেন ? না পারবেন না ।কারন আপনি ঢাকার উত্তরাতে থাকলে তাহলে আপনার জন্য ধানমন্ডিতে পণ্য বিক্রয় করা কষ্টসাধ্য হবে। অনেক ক্রেতা তাদের বাসার কাছের দোকান থেকে পণ্য কিনতে ভালবাসে।
আবার, এদেরকে যদি আপনি টিভি বা রেডিও এর কথা ভাবেন, তাহলে একটা কথা বলবো, সেখানে দুইটি সমস্যার সম্মুক্ষীন হবেন। বিজ্ঞাপন এর খরচ অনেক বেশি এবং সব ব্যবসায়ীদের পক্ষে বিজ্ঞাপন দেয়া সম্ভব নয়। তাহলে আপনি বুঝতেই পারছেন, আপনার প্রচলিত এই বিজ্ঞাপন এর সমস্যাগুলো কোথায় কোথায় ?
কিন্তু একবার ডিজিটাল মার্কেটিং এর কথা ভাবুন এই পদ্ধতিতে আপনি অনলাইনে আপনি একটা দোকান খুলতে পারবেন । যার ফলে টার্গেট করে বিজ্ঞাপন দিতে পারবেন । ডিজিটাল মার্কেটিং ব্যবহার করে আপনি আপনার ব্যবসার জন্য সঠিক কাস্টমারদের নিকট খুব সহজেই আপনি আপনার ব্যবসাকে পৌছে দিতে পারবেন। আর এখানে আপনি একটি নির্দিষ্ট লোকেশন ও নির্দিষ্ট ইন্টারেস্টের উপর আপনার কাস্টমারদের টার্গেট করে আপনার পন্য বা সেবার প্রচার করতে পারবেন।
ডিজিটাল মার্কেটিং এর ধাপসমূহ কী কী?
ডিজিটাল মার্কেটিং অনেকগুলো ধাপ রয়েছে এরমধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য ধাপগুলো হচ্ছে,
১. ওয়েবসাইট।
২. সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং,
৩. সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন,
৪. সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং ও
৫. ই-মেইল মার্কেটিং।
১. ওয়েবসাইটঃ
আমাদের প্রচলিত ব্যাবসার যেমন একটি ঠিকানা থাকে, যেখান থেকে কাস্টমার আপনার ব্যবসা সম্পর্কে জানতে পারে, ঠিক তেমনি ওয়েবসাইট হচ্ছে আপনার ব্যাবসার একটি অনলাইন এড্রেস। যেখানে আপনি আপনার ব্যবসাকে অনলাইনে আপনার কাস্টমারদের নিকট তুলে ধরতে পারবেন। পাশাপাশি অনলাইনের মাধ্যমেই আপনি আপনার পন্য বা সেবা বিক্রি করতে পারবেন। তাহলে বুঝতেই পারছেন ওয়েবসাইট আপনার ব্যবসার ক্ষেত্রে কতটা প্রয়োজন। আর সাধারনত আপনি ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে খুব সহজেই আপনার ওয়েবসাইট বানিয়ে নিতে পারবেন।
বি.দ্র. ওয়েবসাইটের তৈরীর খরচ ব্যবসার উপর ভিত্তি করে বাড়তে বা কমতে পারে।
২. সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংঃ
সোশ্যাল মিডিয়া বর্তমান সময়ে সবথেকে জনপ্রিয় একটি মাধ্যম। বর্তমান সময়ে স্মার্টফোন ব্যবহার করেন, কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেন না এমন লোক খুজে পাওয়া দায়। আর এজন্য বুজতেই পারছেন আপনার ব্যবসার প্রসারের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া কতটা যুগপোযোগী।
ফেসবুক সৃষ্টির মাধ্যমে পৃথিবীতে সোশ্যাল মিডিয়া নামক এক ভার্চুয়াল পৃথিবীর সৃষ্টি হয়েছে। যার প্রভাব প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন মানুষ ঘুম থেকে উঠে প্রথম ফেসবুকে বন্ধুরা কে কি লিখেছে তা দেখতে পছন্দ করে, টুইটারে কি টুইট করেছে তা Check করতে চায়, ইন্সটাগ্রামে নিজের একটি ছবি দিতে চায়। অর্থাৎ সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের জীবনের সাথে নিভিড়ভাবে জড়িত হয়ে যাচ্ছে। এই জন্য আপনি যদি কোন এক স্থানে সকল ধরনের প্রচুর পরিমান কাস্টমার বা গ্রাহক চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে অন্যান্য যেকোন মাধ্যম থেকে কম খরচে অনেক বেশি কাস্টমার আকর্ষন করা যায়।
সোশ্যাল মিডিয়া মধ্যে ফেসবুক, টুইটার, পিন্টারেস্ট, লিঙ্কডিন ইত্যাদি অন্যতম। তাই এই সোশ্যাল মিডিয়া গুলোতে মার্কেটিং অবশ্যই করা উচিত।
৩. সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনঃ
ডিজিটাল মার্কেটিং এর একটি ব্যাপক জনপ্রিয় উপাদান হল সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন/এসইও। এসইও হচ্ছে এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে গুগল বা অন্য সার্চ ইঞ্জিনগুলো থেকে ভিজিটর আনা হয়। গুগল হচ্ছে সব ধরনের কাস্টমারের একটি বড় উৎস। আমরা কোন কিছু খুঁজতে সর্বপ্রথম গুগল কে ব্যবহার করি। আপনার যা লিখে সার্চ করি তাকে Keyword বলে। গুগল সার্চ রেজাল্টের প্রথমে যেই ওয়েবসাইট লিঙ্ক আসে সে ওয়েবসাইটেই সবচেয়ে বেশি ভিজিটর পাওয়া যায়। আর এই Keyword ভিত্তিক সার্চ রেজাল্টে রাঙ্কিং করাই হল এসইও। যদি কেউ তার ব্যবসায়িক ওয়েবসাইটের এসইও না করে তাহলে সে অনেক বড় অংকের একটি ভিজিটর হারাবে। যা তার ব্যবসায়ের মুনাফা বৃদ্ধিতে ব্যহত করবে।
৪. ই-মেইল মার্কেটিংঃ
বর্তমান সময়ে আমরা কোন তথ্য বা ফাইল আদান প্রদান করার জন্য যেই মাধ্যমটি সহজ ও নিরাপদ মনে করি তা হল ই-মেইল। এই ই-মেইলের মাধ্যমে যে মার্কেটিং করা হয় তাকে ইমেল মার্কেটিং বলে। আপনি যদি USA বা অন্য কোন উন্নত দেশে ডিজিটাল মার্কেটিং করার চিন্তা করেন তাহলে ইমেইল মার্কেটিং এর কোন বিকল্প নাই। তারা সকল ধরনের কাজ ই-মেইলের মাধ্যমে করতে পছন্দ করে বলে প্রচুর ইমেল ব্যবহার করে। তাই এই মার্কেটিং খুবই কার্যকর। বাংলাদেশেও এর যথেষ্ট ব্যবহার রয়েছে।
৫. সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিংঃ
সার্চ ইঞ্জিন সম্পর্কে ইতিমধ্যে উল্লেখ কারা হয়েছে। প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ২.৩ মিলিয়ন মানুষ গুগল ব্যবহার করে। সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং হল একটি পেইড মার্কেটিং পদ্ধতি। গুগল কে টাকার দেওয়ার মাধ্যমে গুগল নির্দিষ্ট কীওয়ার্ডে সার্চ রেজাল্টের প্রথমে আপনার ওয়েব সাইটের লিঙ্ক দেখাবে। যার মাধ্যমে আপনি প্রচুর পরিমার টার্গেটেড ভিজিটর পাবেন। যা আপনার কাস্টমারে পরিনত হবে। আপনি যদি এই পদ্ধতি ব্যবহার না করেন তাহলে হয়ত আপনার প্রতিযোগী আপনার এই কাস্টমার সোর্স ব্যবহার করে আপনার থেকে এগিয়ে থাকতে পারে।
প্রত্যাশা রাখছি উপরোক্ত বিষয়গুলো আপনাকে আপনার ব্যবসার জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রয়োজনীয়তা বুঝাতে পেরেছে। আর্টিকেলটি কেমন লেগেছে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।
Recent Comments